Blogwebkeycost

পরিবারের একজনকে আইনজীবী (Lawyer) পড়াতে কত খরচ হবে?

আইনজীবী (Lawyer) হওয়া অনেকেরই স্বপ্ন। এটি একটি সম্মানজনক এবং চ্যালেঞ্জিং পেশা, যা শুধু আর্থিক সচ্ছলতা নয়, সামাজিক মর্যাদাও প্রদান করে। তবে এই পেশায় আসতে গেলে শিক্ষাগত যোগ্যতা, সময় এবং আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। পরিবারের কোনো সদস্যকে আইনজীবী হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে খরচের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো, একজন আইনজীবী হওয়ার জন্য পড়াশোনা করতে গেলে কত খরচ হতে পারে এবং কী কী বিষয় বিবেচনা করতে হবে।

আইনজীবী হওয়ার প্রাথমিক ধাপ: শিক্ষাগত যোগ্যতা

আইনজীবী হওয়ার জন্য প্রথমেই প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। বাংলাদেশে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য সাধারণত দুইটি পথ রয়েছে:

এলএলবি (LLB) এটি একটি স্নাতক ডিগ্রি, যা সাধারণত ৪ বছরের কোর্স।

এলএলএম (LLM) এটি একটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, যা সাধারণত ১-২ বছরের কোর্স।

এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীনে বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এরপরই একজন ব্যক্তি আইনজীবী হিসেবে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করেন।

আইন পড়ার খরচ

আইন পড়ার খরচ নির্ভর করে শিক্ষার্থী কোন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে এবং সে প্রতিষ্ঠানের ফি কাঠামোর উপর। বাংলাদেশে আইন পড়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি অনেক বেশি।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার খরচ তুলনামূলকভাবে কম। বাংলাদেশের প্রায় সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই আইন বিভাগ রয়েছে। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি।

টিউশন ফি ,সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি প্রতি সেমিস্টারে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।

হল ফি, হলে থাকার জন্য প্রতি মাসে ১,০০০ থেকে ২,০০০ টাকা খরচ হতে পারে।

অন্যান্য খরচ,  বই, পরীক্ষার ফি, প্রজেক্ট ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতি সেমিস্টারে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা লাগতে পারে।

মোটামুটিভাবে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার জন্য ৪ বছরে মোট খরচ হতে পারে ১,০০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার খরচ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগ রয়েছে, যেমন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি।

টিউশন ফি: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি প্রতি ক্রেডিট ২,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। একটি সেমিস্টারে সাধারণত ১২-১৫ ক্রেডিট থাকে। অর্থাৎ প্রতি সেমিস্টারে টিউশন ফি ২৪,০০০ থেকে ৭৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

অন্যান্য খরচ: বই, পরীক্ষার ফি, লাইব্রেরি ফি, প্রজেক্ট ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতি সেমিস্টারে ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা লাগতে পারে।

মোটামুটিভাবে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার জন্য ৪ বছরে মোট খরচ হতে পারে ৫,০০,০০০ থেকে ১০,০০,০০০ টাকা।

 পরিবারের একজনকে আইনজীবী (Lawyer) পড়াতে কত খরচ হবে?

বার পরীক্ষার খরচ

আইনজীবী হওয়ার জন্য এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অধীনে বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। এই পরীক্ষার জন্য কিছু খরচ রয়েছে:বার পরীক্ষার ফি সাধারণত ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।কোচিং ফি, অনেকেই বার পরীক্ষার জন্য কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। কোচিং ফি ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।বই ও অন্যান্য খরচ, বার পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বই ও অন্যান্য খরচ বাবদ ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা লাগতে পারে।মোটামুটিভাবে, বার পরীক্ষার জন্য মোট খরচ হতে পারে ৪০,০০০ থেকে ৯০,০০০ টাকা।

আইনজীবী হওয়ার পরের খরচ

আইনজীবী হওয়ার পরও কিছু খরচ রয়েছে, যা একজন আইনজীবীকে বহন করতে হয়। যেমন:বার কাউন্সিলের সদস্যপদ ফি: বার কাউন্সিলের সদস্য হওয়ার জন্য বার্ষিক ফি দিতে হয়। এই ফি সাধারণত ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।অফিস খরচ: আইনজীবী হিসেবে কাজ করার জন্য অফিস স্থাপন করতে হয়। অফিসের ভাড়া, আসবাবপত্র, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ইত্যাদি খরচ বাবদ মাসে ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।বই ও জার্নাল: আইনজীবী হিসেবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় বই ও জার্নাল ক্রয় করতে হয়। এই খরচ বাবদ এককালীন ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।

মোট খরচের হিসাব

একজন আইনজীবী হওয়ার জন্য মোট খরচের হিসাব নিম্নরূপ:সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা: ১,০০,০০০ থেকে ১,৫০,০০০ টাকা (৪ বছর) + বার পরীক্ষার খরচ ৪০,০০০ থেকে ৯০,০০০ টাকা = মোট ১,৪০,০০০ থেকে ২,৪০,০০০ টাকা।বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা: ৫,০০,০০০ থেকে ১০,০০,০০০ টাকা (৪ বছর) + বার পরীক্ষার খরচ ৪০,০০০ থেকে ৯০,০০০ টাকা = মোট ৫,৪০,০০০ থেকে ১০,৯০,০০০ টাকা।

আর্থিক সহায়তা ও স্কলারশিপ

আইন পড়ার খরচ অনেকের জন্য বড় একটি বাধা হতে পারে। তবে বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা থেকে স্কলারশিপ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। যেমন:সরকারি স্কলারশিপ: বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রদান করে, যেমন প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট, জাতীয় শিক্ষা বৃত্তি ইত্যাদি।বেসরকারি স্কলারশিপ: অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবী ও অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ প্রদান করে। যেমন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি।

পরিবারের কোনো সদস্যকে আইনজীবী হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন থেকে শুরু করে বার পরীক্ষা পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে খরচের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলে খরচ তুলনামূলকভাবে কম হবে, তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করলে খরচ অনেক বেশি হবে। তবে স্কলারশিপ ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে এই খরচ কিছুটা কমানো সম্ভব। আইনজীবী হওয়ার পরও কিছু খরচ রয়েছে, যা একজন আইনজীবীকে বহন করতে হয়। তাই পরিবারের সদস্যকে আইনজীবী পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে খরচের বিষয়টি ভালোভাবে বিবেচনা করা উচিত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button